সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন
এম.কে. রানা (অতিথি প্রতিবেদক) ॥ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বরিশালে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন রাজনীতি। বিশেষ করে বরিশাল সদর-৫ আসনে মনোনয়ন রাজনীতি ক্রমশই জটিল হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করার পরই জটির সমীকরণ আর নানামুখী গুঞ্জন শুরু হয় বরিশালে। যদিও শেষ পর্যন্ত নানক এ আসনে ফরম জমা দেননি বলে জানা গেছে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ সাবেক সেনা সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম, সদ্য বিদায়ী বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়াও আরো ৭ জন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে তৃণমূল রাজনীতিতে এগিয়ে থাকা সাদিক আব্দুল্লাহ নাকি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাহিদ ফারুক শামীমকে এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দিবে এ নিয়েই চলছে জোড় গুঞ্জন। অবশ্য গত পাঁচ বছরে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশাল সদর আসনে তৃণমূল আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করার কারিগর সাদিককে এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তাদের মতে, কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা উঠবে, আর কাজ না করলে তিনি হবেন ক্লিন ইমেজের অধিকারী।
তবে দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই একাট্টা হয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে কাজ করবেন সকল নেতাকর্মী এমনটা দাবি বরিশালের নেতাদের।
সূত্রমতে, সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মহানগর আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তখণ বিভিন্ন মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছিল “তৃণমূলের জয়, নৌকার মাঝি সাদিক”। জানা যায়, দলীয় হাইকমান্ডের জড়িপে তৃণমূলের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ছিলেন অপেক্ষাকৃত তরুন সাদিক আব্দুল্লাহ। আর দলীয় নীতি নির্ধারকরা এমনকি দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীও তৃণমূলের পছন্দে থাকা সাদিক আব্দুল্লাহকেই বরিশাল সিটি মেয়র পদে মনোনীত করেছিলেন। আর নেতাকর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে এনেছিল।
জানা যায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সফল মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা এক প্রকার হতাশায় জর্জরিত হয়ে পরেছিলেন। তখন শওকত হোসেন হিরন বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সঠিক দিক নির্দেশনা বা সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখার মতো তেমন কেউ ছিলনা। দলের সেই করুন অবস্থায় বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের হাল ধরেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
পরবর্তিতে তাকে ঘীরে সকল নেতা কর্মীরা পুনরায় উজ্জীবিত হয়। নেতা কর্মীদের সাথে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সার্বক্ষনিক যোগাযোগ এবং জনগনের সাথে তার নিবীড় সম্পৃক্ততা মানুষের মনে তাকে নিয়ে বরিশাল সিটির পরবর্তী নগরপিতা হিসাবে স্বপ্ন দেখায়। তিনি যখন দলের হাল ধরেন তখন বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিলনা। পরবর্তিতে কমিটি হলে তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েই মাঠ গোছাতে শুরু করেন সাদিক আব্দুল্লাহ। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে মহানগর আওয়ামীলীগকে চাঙা করে তোলেন তিনি। তবে মেয়র পদে থাকাকালীন বিছিন্ন কিছু ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আর তার প্রতি জনপ্রিয়তায় ইর্শান্বিত হয়ে একটি পক্ষ উঠে-পড়ে লাগে। সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনে ছিটকে যান তিনি। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয়া সাদিক থেমে থাকেননি। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কার্যক্রম বেশ দক্ষতার সাথেই পালন করেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিই তার প্রমান। এমনকি বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে রয়েছেন তিনি। অপরদিকে সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার জোর লবিং তদ্বিরে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে অনেককে।
তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালের মতোই দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও তৃণমূলের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের নেতা সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দিবেন। আর শেষ হাসি নৌকার বিজয় হবে।
এদিকে বরিশালের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তীলে তীলে বরিশালের রাজনীতিতে ভীত গড়েছেন সাদিক। গত সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতের দিকটি বিবেচনা করলে কিংবা বরিশালে আওয়ামীলীগের দলীয় অবস্থান বিবেচনায় নিয়েই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মনোনীত করতে হবে। কেননা বিএনপি যদি শেষ মূহুর্তে নির্বাচনে অংশ নেয় তবে শক্ত প্রতিরোধ গড়া কিংবা বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য সাদিকের বিকল্প নেই।
বিচার বিশ্লেষন যা-ই হোক শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কে হবেন বরিশালের মর্যাদাপূর্ণ এ আসনের (বরিশাল-৫) নৌকার কান্ডারী।
Leave a Reply